এবার অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের দৃশ্যপটই মনে হয় তৈরি ছিল আর্জেন্টিনার যুবাদের জন্য। আসরের ইতিহাসে এর আগে কাপ না জেতা দল এবার শৈল্পিক খেলায় সবাইকে মুগ্ধ করে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের মতো দলকে উড়িয়ে উঠে গিয়েছিল সেমিফাইনালে। সেমিফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে যেভাবে পিছিয়ে পড়েও শেষ মুহূর্তে ম্যাচে সমতা আনেন মেসির দেশের যুবারা তখন সবাই ভেবেছিল জার্মান বাধা পেরিয়ে ফাইনালের পথে মনে হয় এক পা দিয়েই রাখল তারা। তবে শেষ রক্ষা হয়নি সমতা আনার পরও পরাজয় সঙ্গী হয়েছে আর্জেন্টিনার যুবাদের। টাইব্রেকারের হারে শেষ হয়েছে প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন।

আর্জেন্টিনার মূল দল বেশ কয়েকবারই বিশ্বকাপ স্বপ্ন বিসর্জন দিতে হয়েছে জার্মানদের কাছে। ১৯৯০ আর ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনাল এই জার্মানির কাছেই হেরেছিল নীল-সাদারা। এবার ছোটদের ফুটবলেও দেখা গেল একই ঘটনা। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে টাইব্রেকার হারে স্বপ্ন ভাঙল তাদের।

ইন্দোনেশিয়ার সুরাকার্তায় সেফিাইনালে কিন্তু প্রথমার্ধ শেষে এগিয়ে ছিল আর্জেন্টিনাই। তবে এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত ফাইনালে যাওয়া হলো না তাদের। দ্বিতীয়ার্ধের দুর্দান্ত ফুটবলে কামব্যাকের গল্পই লিখল জার্মান তরুণরা। শেষ মুহূর্তে রবার্তো সমতা আনলেও টাইব্রেকারে ভাগ্যটা বদল হয়নি তাদের। ২ ডিসেম্বরের ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ফ্রান্স এবং মালির ম্যাচে বিজয়ী দল।

দুপুর ২টা ৩০মিনিটে ম্যাচের শুরুতেই জার্মানিই এগিয়ে যায়। দ্রুতগতির এক কাউন্টার অ্যাটাকে আর্জেন্টাইন বক্সে চলে যান জার্মান মিডফিল্ডার ডারউইচ। তার পা থেকে বল যায় ব্রুনারের পায়ে। আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার গোরোসিতোকে পাশ কাটিয়ে দূরহ কোণ থেকে শট নেন প্যারিস ব্রুনার। বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডে খেলা এই উইঙ্গারের গোলে লিড নেয় জার্মানি।

গোল খেয়ে জার্মানির উপর চড়াও হয় আর্জেন্টিনার যুবারা। দুই ফুলব্যাক বারবার ব্যস্ত করেছেন জার্মানির রক্ষণভাগকে। প্রথম গোলের উৎসও ছিলেন তারা। বক্সের ভেতর মাপা ক্রস খুঁজে নেয় রবার্তোকে। বল জালে জড়াতে কোন ভুলই করেননি তিনি। আর প্রথমার্ধের একেবারে অন্তিম সময়ে কাউন্টার অ্যাটাকে নিজের এবং দলের দ্বিতীয় গোলও করেন রুবের্তো। ২-১ এর লিডে ফাইনালের স্বপ্ন দেখা শুরু করে জুনিয়র আলবেসিলিস্তরা।

এরপর দ্বিতীয়ার্ধের দারুণ এক প্রত্যাবর্তন ঘটায় জার্মানি। গোলরক্ষকের ভুলে বল পেয়ে ডিবক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত ফিনিশে জার্মানিকে সমতায় ফেরান ব্রুনার। এরপর আর্জেন্টিনার বিপদ আরও বাড়ে ম্যাক্স মোরেশডাটের গোলে। ডিবক্সে ফাঁকায় বল পেয়ে হেডে বল জালে জড়ান এই স্ট্রাইকার।

আর্জেন্টিনার হার যখন সময়ের ব্যাপার তখনই আরো একবার দলকে পথ দেখান রুবের্তো। যোগ করা ৮ মিনিটের শেষ সময়ে গোল করে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করেন দ্য জায়ান্ট খ্যাত এই তরুণ।

টুর্নামেন্টের ফরম্যাট মেনে ৯০ মিনিট শেষে খেলা চলে যায় টাইব্রেকারে। যেখানে জার্মান গোলরক্ষক কনস্ট্যান্টিন হেইডির কাছে পরাস্ত হয় আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনার প্রথম দুই শট ঠেকিয়ে দলকে অনেকটাই এগিয়ে দেন। তবে আগের ম্যাচের নায়ক অধিনায়ক এচেভেরিওর পেনাল্টি মিস ভুগিয়েছে তাদের। শেষ পর্যন্ত ৪-২ গোলের টাইব্রেকারের হারে ফাইনালের স্বপ্নভঙ্গ হলো আর্জেন্টিনার।